ক্যারিয়ার হিসেবে আর্টিক্যাল রাইটিং
বর্তমান যুগে বেশিরভাগ কাজই এখন অনলাইনভিত্তিক। আর এই কথাটি বললে ভুল হবে না যে অনলাইন মার্কেটিং জগৎ এখন আর্টিক্যাল রাইটিং এর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। সুতরাং এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে একজন ভালো মানের আর্টিক্যাল রাইটার এর গুরুত্ত অনেক বেশি। আর গুরুত্ত আছে বলেই তার আয়ও বেশি হবে- এটাই কি স্বাভাবিক নয়? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চাইলেই কি ভালো মানের রাইটার হওয়া সম্ভব? কেন নয়? অবশ্যই সম্ভব। আর এটা বলছি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই। আর্টিক্যাল রাইটিং সম্পর্কে প্রথম শুনেছিলাম আমার মায়ের কাছ থেকে। তারপর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং ইন্টারনেট এর মাধ্যমে এর বিস্তারিত জানতে পারি। প্রথমে ভাবতাম অনেক কঠিন কাজ। দ্বিধায় ভুগছিলাম সফল হতে পারব কিনা। সাহস যুগিয়েছিল তখন মা। অনেক চেষ্টার পর ওডেস্কে আর্টিক্যাল রাইটিং এর একটি কাজ পেয়ে যাই এবং সফলভাবে কাজটি সম্পন্ন করায় ক্লায়েন্টও সন্তুষ্ট হয়। আর্টিক্যাল রাইটিং এর প্রথম ফিডব্যাক আর আজ আমি আপনাদের সাহস দিচ্ছি, চেষ্টা করলে আপনারাও অবশ্যই সফল হতে পারবেন। শুধু প্রয়োজন বেশ কিছু বিষয়ে দক্ষতা। প্রফেশনাল রাইটার হতে হলে যেসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে প্রথমত, ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। তৃতীয়ত, রিসার্চে দক্ষ হতে হবে এবং সেই সাথে প্রয়োজন ধৈর্য। চতুর্থত, প্রচুর পরিমানে লেখার চর্চা করতে হবে। পঞ্চমত, সময় এবং নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। এখন আপনি যদি আর্টিক্যাল রাইটিং এ যথেষ্টই উৎসাহী হন, তবে দেখে নেয়া যাক একটি ভালো মানের আর্টিক্যাল লিখতে হলে যেসব অংশে বিশেষ গুরুত্ত দিতে হবে। আর্টিকেলের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশসমূহ আর্টিকেলের অংশসমূহ টাইটেল প্রথমেই একটি আর্টিকেলের যে অংশটি আমাদের নজরে আসে সেটি হলো আর্টিক্যালটির টাইটেল। টাইটেল এর উপর ভিত্তি করেই পাঠক সেটি পড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। সুতরাং, ভালো মানের আর্টিক্যাল লিখতে হলে অবশ্যই একটি নজরকারা টাইটেল নির্বাচন করতে হবে এবং আর্টিকেলের বিষয়টি যেন তাতে সম্পূর্ণই প্রতিফলিত হয়। সূচনা আর্টিক্যালটির সূচনা করুন এমনভাবে যেন তার বিষয় সম্পর্কে পাঠকরা পরিষ্কার ধারণা লাভ করতে পারে এবং পাঠক যেন তা পড়ার আগ্রহ ধরে রাখতে পারে। মূল বিষয় আর্টিকেলের মূল বিষয়টি কয়েকটি অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বিস্তারিত বর্ণনা করুন। তবে অপ্রাসঙ্গিক অথবা অপ্রয়োজনীয় কথা দিয়ে আর্টিক্যালটি অযথাই বড় করবেন না। এতে পাঠক তার পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পাঠকের আরও বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অনুচ্ছেদগুলোরও উপযুক্ত নামকরণ করে ফেলুন। ছবি আর্টিকেলে ছবি যুক্ত করার মাধ্যমে সেটিকে আরও বেশি জীবন্ত করে তুলুন। যেকোনো বিষয় বোঝার ক্ষেত্রে এটি অনেকাংশে সাহায্য করে এবং এতে পাঠক সম্প্রদায় লেখাটি পড়তে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। সংযোগ স্থাপন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আর্টিকেলের এক অংশের সাথে আরেক অংশের মধ্যে কিছু সংযোগমূলক কথা লিখুন যাতে পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখা যায়। সর্বশেষ অংশ আর্টিকেলের সর্বশেষ অংশে একটি চূড়ান্ত মতামত, মন্তব্য, পরামর্শ অথবা সম্পূর্ণ বিষয়টিকে সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করুন। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকলে আপনি আর্টিক্যাল রাইটিং এ সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারবেন। তবে লেখা শুরু করার আগে অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখুন- আপনার লেখাটি কোথায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে- পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ব্লগ অথবা কর্পোরেট ওয়েবসাইট? কাদের উদ্দেশ্যে লিখছেন- শিক্ষার্থী, কিশোর-কিশোরী নাকি সাধারণ মানুষের জন্য? আপনার লেখার উদ্দেশ্য কি- উপদেশ, পরামর্শ, কোন বিষয় অবগত, বর্ণনা নাকি তুলনা করা? আপনার আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়গুলো প্রথমে ড্রাফ্ট করুন। তারপর সেসব আর্টিকেলে ধারাবাহিকভাবে বিস্তারিত লিখুন। এসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে আর্টিকেলের ভাষা এবং ধরণ ঠিক করুন। আপনার আর্টিকেলের ভাষা হতে পারে ফরমাল, সেমি-ফরমাল অথবা ইনফরমাল যা নির্ভর করে পাঠক সম্প্রদায়ের উপর এবং সেটি কোথায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার উপর। আর্টিকেলে কখনই অতি-ব্যক্তিগত অথবা অতিরিক্ত ইমোশনাল আলোচনা করবেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো লেখা শুরুর আগে অবশ্যই সেই বিষয়ের খুঁটিনাটি যথেষ্ট রিসার্চ করুন। আর্টিক্যালটি এমনভাবে লিখুন যেন আপনি পাঠকদের সাথে সরাসরি কথা বলছেন। একজন লেখক নয়, পাঠকের দৃষ্টিকোণ বিচার-বিশ্লেষণ করে তবেই লিখুন। ছোটবেলা থেকেই আমরা সবাই একটি কথার সাথে অতি পরিচিত- “পরিশ্রম সৌভাজ্ঞের প্রসূতি”। অর্থাৎ, যেকোনো কাজে সফল হতে হলে অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। তেমনি আর্টিক্যাল রাইটিং খুব সহজেই শুরু করা গেলেও, এর মানোন্নয়নের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তাহলে চলুন দেখি লেখার মানোন্নয়নের জন্য কি কি করা যেতে পারে। লেখার মানোন্নয়নে করণীয় বিষয় উন্নতমানের ব্লগপোস্টগুলো পড়ুন। তাদের লেখার ধরণ অনুসরণ করুন। কিন্তু কখনও তাদের লেখা হুবহু কপি করবেন না। লেখাগুলো পড়বেন শুধুমাত্র আইডিয়া পাবার জন্য। প্রচুর পরিমাণে আর্টিক্যাল লেখার চর্চা করুন। লেখার মানোন্নয়নে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়াতে একটিভ থাকুন। উন্নত মানের ব্লগের পেজে এবং গ্রুপগুলোতে দৃষ্টি রাখুন। এতে বিভিন্ন ব্লগের আপডেট জানতে পারবেন। প্রফেশনাল রাইটারদের সাথে কানেকটেড থাকুন। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ এবং টিপস নিন। ♦আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- সবসময় নিজেকে কম্পিউটারের পেছনে আড়াল করে রাখবেন না। প্রফেশনালদের নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিন। এতে সরাসরি তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবেন। রাইটিং এ দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ টিপস শেয়ার করা হয়। এমন একটি সাইট হলো- http://writing-world.com/। এছাড়াইউটিউবে রাইটিং সম্পর্কিত ভিডিও টিউটোরিয়ালগুলোও দক্ষতা বাড়াতে অনেকাংশে সাহায্য করে। ♦“ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চাই, কিভাবে শিখব?”- বারংবার এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি আমি। যাদের মনে এমন প্রশ্ন আছে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ফ্রিল্যান্সিং শেখার কিছু নেই। এটি শুধুমাত্র কাজের একটি মাধ্যম। যেটি প্রয়োজন সেটি হলো- কাজে দক্ষতা অর্জন। যেমন- লেখালেখিতে আপনার প্রতিভা থাকলে, সেটিতে আরও দক্ষতা বাড়িয়ে তারপরই কাজের জন্য অ্যাপ্লাই করুন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে আমরা আর্টিক্যাল রাইটিং এর কাজ পেতে পারি? আর্টিক্যাল রাইটিং এর কাজের ক্ষেত্র অনেকে বলেন- “বিদেশের ওই সাদা চামড়ারও দাম আছে, আমরা বাংলাদেশীরা আর্টিক্যাল রাইটিং-এ খুব ভালো আয় করতে পারব না। ” এই ধারণাটি সম্পূর্ণই ভুল। আপনি দক্ষতা অর্জন করলে এবং মানসম্মত আর্টিক্যাল লিখলে অবশ্যই তার উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাবেন। কিন্তু সেজন্য আপনাকে সঠিক জায়গায় শ্রম দিতে হবে। ♦আর্টিক্যাল রাইটিং এর কাজ পেতে পারেন এমন বহুল পরিচিত কিছু মার্কেটপ্লেইস হলো- ওডেস্ক, ইল্যান্স, ফ্রিল্যান্সার এবং এ ধরনের আরও কিছু সাইট। কিন্তু এসব ছাড়াও আরও কিছু মার্কেটপ্লেইস আছে যেখানে আর্টিকেলের ডিম্যান্ড আরও বেশি। এমন কিছু সাইট হলো- jobs.problogget.net এই মার্কেটপ্লেইসটি আমাদের দেশের BDjobs এর মত। এখানে ক্লায়েন্ট রাইটার এর খোঁজে জব পোস্ট করে এবং ফ্রিল্যান্সার খোঁজে নিজের জন্য উপযুক্ত কাজ। www.writergazette.com এই সাইট শুধুমাত্র জব পোস্টিং করেই থেমে থাকেনি, এখানে রাইটারদের জন্য প্রয়োজনীয় টিপসও শেয়ার করা হয় এবং আরও একটি মজার বিষয় হলো এখানে রাইটিং কন্টেস্ট এর লিস্টিংও করা হয়। www.writingjobsource.com এই সাইটটিতেও প্রতিদিন অনেক রাইটিং জব পোস্ট হয় যেগুলোতে রাইটারদের ডিম্যান্ড অনেক বেশি। আরও বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে আর্টিক্যাল লিখে প্রতিটি আর্টিকেলের জন্য $50 থেকে $500 পর্যন্ত আয় করা যায়। এমন কিছু সাইট হলো- ♦www.writersweekly.com ♦www.makealivingwriting.com ♦www.stretcher.com ♦www.beafreelanceblogger.com ♦www.smithsonianmag.com এসবমার্কেটপ্লেইস ছাড়াও একজন রাইটার Blogging, Adsence এবং Affiliation এর মাধ্যমেও অনেক বেশি আয় করতে পারে। তবে সেজন্য পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকাও জরুরি। আর্টিক্যাল রাইটিং-এ দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও পারিবারিক সম্মতি না থাকায় অনেকে এটি ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারে না । এর একমাত্র কারণ হলো আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এমনকি শিক্ষিত সমাজও আর্টিক্যাল রাইটিং এবং ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখে না। অনেকে অনলাইনে কাজ করা বলতে বোঝে ডোল্যান্সার, স্কাইল্যান্সার এর মত কিছু লোকঠকানো কাজকে। সেজন্য প্রয়োজন সাধারন মানুষকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সচেতন করা। আর আপনি যথাসাধ্য চেষ্টা করলে অবশ্যই সফলতা আপনার চরণ চুম্বন করতে বাধ্য। |
|